বৈশ্বিক জনস্বাস্থ্যে এ মুহূর্তে সবচেয়ে বড় উদ্বেগের কারণ অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স (এএমআর)।
যদি কারও শরীরে ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ ঘটে এবং সেই রোগ নিরাময়ে তিনি যদি চিকিৎসকের পরামর্শমত সঠিক পরিমাণে এবং পর্যাপ্ত সময় ধরে অ্যান্টিবায়োটিক গ্রহণ না করেন তাহলে ব্যাকটেরিয়াগুলো পুরোপুরি ধ্বংস না হয়ে উল্টো আরও শক্তিশালী হয়ে উঠতে পারে। তখন এই ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে ওই অ্যান্টিবায়োটিক পরে আর কাজ করে না। অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োগের পরেও ব্যাকটেরিয়ার এই টিকে থাকার ক্ষমতা অর্জনকে অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স বলা হয়।
দেশে শিশুস্বাস্থ্যে চিকিৎসকদের জন্য বড় আশঙ্কা হয়ে দেখা দিচ্ছে রক্ত আমাশয়। রোগটির জীবাণুর (শিগেলা) বিরুদ্ধে এখন কাজ করছে না অধিকাংশ অ্যান্টিবায়োটিক। বিশেষ করে এতোদিন রোগটি নিরাময়ে প্রথম ও দ্বিতীয় জেনারেশনের যেসব অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারে পরামর্শ দেয়া হতো, জীবাণুটি সেগুলোর প্রতিরোধী হয়ে উঠেছে।
রক্ত আমাশয়ের চিকিৎসায় বহুল ব্যবহৃত চারটি ওষুধের (সিপ্রোফ্লক্সাসিন, অ্যাজিথ্রোমাইসিন, মেসিলিনাম, সেফট্রিয়াক্সোন) বিরুদ্ধে এখন প্রতিরোধী শক্তি গড়ে তুলেছে শিগেলা। রক্ত আমাশয়ের জন্য প্রথম সারির অ্যান্টিবায়োটিক সিপ্রোফ্লক্সাসিনের বিরুদ্ধে ৭০ শতাংশ ক্ষেত্রেই জীবাণু তা সহ্য করতে শিখে গেছে। বিশেষ করে দেশের পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের চিকিৎসা করতে গিয়ে চিকিৎসকদের এমন পরিস্থিতির মোকাবেলা করতে হচ্ছে বলে এক গবেষণায় উঠে এসেছে।
![](https://betterhealth-bd.org/wp-content/uploads/2024/02/news_335776_2-300x169.jpg)
‘Antimicrobial resistance in shigellosis: A surveillance study among urban and rural children over 20 years in Bangladesh’ শীর্ষক এক গবেষণায় এ পর্যবেক্ষণ উঠে আসে। গবেষণাটি যুক্তরাষ্ট্রের পাবলিক লাইব্রেরি অব সায়েন্সের বৈজ্ঞানিক জার্নাল ‘পলস ওয়ানে’ প্রকাশিত হয়েছে। গবেষণাটি করেছেন আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআর,বি) ও যুক্তরাষ্ট্রের জনস হপকিন্স ব্লুমবার্গ স্কুল অব পাবলিক হেলথের ১৩ জন গবেষক। মূলত, রাজধানী ঢাকার মহাখালী ও চাঁদপুরের মতলবে আইসিডিডিআর,বি পরিচালিত হাসপাতালে ডায়রিয়াজনিত কারণে ভর্তি শিশুদের (পাঁচ বছরের কম বয়সী) মলের নমুনা পরীক্ষা করে গবেষণাটি করা হয়।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) নির্দেশনা অনুযায়ী, শিশুদের মধ্যে রক্ত আমাশয়ের জন্য অ্যান্টিবায়োটিকের প্রথম পর্যায়ের ওষুধ হলো সিপ্রোফ্লক্সাসিন। দ্বিতীয় সারির ওষুধ হলো মেসিলিনাম ও সেফট্রিয়াক্সোন। অ্যাজিথ্রোমাইসিন শুধু প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য দ্বিতীয় পর্যায়ের ওষুধ হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে। বছরে পাঁচ বছরের কম বয়সী সাড়ে চার লাখ শিশু বিশ্বব্যাপী শুধু ডায়রিয়ার কারণে মারা যায়। বেশির ভাগই সাব-সাহারা ও দক্ষিণ এশিয়ায়। শিশুদের রক্ত আমাশয় সিপ্রোফ্লক্সাসিন ও অ্যাজিথ্রোমাইসিন প্রতিরোধী হয়ে ওঠায় তা বহু ওষুধবিরোধী বা মাল্টি ড্রাগ রেজিস্ট্যান্সের সৃষ্টি হয়েছে বলে জানিয়েছে আইসিডিডিআর,বি।
বিশেষজ্ঞরা পরীক্ষা করে দেখতে পান, ২০২০ সালের মধ্যে নগর ও গ্রামে প্রথম ও দ্বিতীয় জেনারেশনের অ্যান্টিবায়োটিকগুলো রক্ত আমাশয়ের জীবানুর বিরুদ্ধে নিম্নোক্ত শতকরা হারে প্রতিরোধী হয়ে উঠেছে।
অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ | নগর | গ্রাম |
মেসিলিনাম | ১৯% | ৩৪ % |
অ্যাজিথ্রোমাইসিন | ৫১% | ৫৫% |
সিপ্রোফ্লক্সাসিন | ৭২% | ৮৪% |
সেফট্রিয়াক্সোন | ৮% | ১২% |
গবেষণা বলছে, নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে পাঁচ বছর বয়সী শিশুদের অসুস্থতা ও মৃত্যুর হার বৃদ্ধির জন্য এ শিগেলা দায়ী। তবে সিগেলা বা রক্ত আমাশয় বেশির ভাগ ক্ষেত্রে অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল প্রতিরোধী হয়ে উঠেছে। এতে হাসপাতালে ভর্তি থাকার সময় দীর্ঘায়িত হচ্ছে। জীবাণু অ্যান্টিমাইক্রোবিয়ালবিরোধী নতুন স্ট্রেইন তৈরি করছে। অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল প্রতিরোধের তীব্রতা দ্রুত কমানো না গেলে ২০৫০ সালের মধ্যে প্রতি ৩ সেকেন্ডে একজন মানুষ মারা যাবে।
আইসিডিডিআর,বি বলছে, ডায়রিয়ার জীবাণু শিগেলায় অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স গড়ে ওঠা খুবই উদ্বেগজনক। অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্সের ফলে প্রতি বছর লাখ লাখ মানুষের মৃত্যু হচ্ছে। অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স বৃদ্ধি মানুষ ও গবাদিপশুর মধ্যে অ্যান্টিবায়োটিকের অপপ্রয়োগের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মানবসভ্যতার অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে ওষুধের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে উঠেছে। শুধু অ্যান্টিবায়োটিকের ক্ষেত্রে নয়, যেকোনো ওষুধের অতিমাত্রায় ও অপপ্রয়োগের ফলে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি হচ্ছে।
আরো বিস্তারিতভাবে জানতে নিচের লিংকে ক্লিক করুন-
https://journals.plos.org/plosone/article?id=10.1371/journal.pone.0277574