অ্যান্টিবায়োটিক বা অ্যান্টিমাইক্রোবায়াল ড্রাগ এমন এক ধরণের ওষুধ যা ব্যাকটেরিয়া সংক্রমিত রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করে। এই ওষুধ মানুষ বা পশুর দেহে প্রয়োগ করলে এটি শরীরের ব্যাকটেরিয়া মেরে ফেলে বা এর বংশবিস্তার রোধের মাধ্যমে রোগ নিরাময় করে। তাই ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে অ্যান্টিবায়োটিককে চিকিৎসা বিজ্ঞানের এক আশীর্বাদ বলা যায়।
কিন্তু সেই অ্যান্টিবায়োটিক সঠিক উপায়ে প্রয়োগ না করলে হিতে বিপরীত হতে পারে।
একটা পরিসংখ্যান থেকে পাওয়া যায়, প্রতি বছর বিশ্বব্যাপী সাত লাখ মানুষের মৃত্যু হয় শুধু অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্সের কারণে, যেখানে বিশ্বের সব দেশই কম বা বেশি ক্ষতিগ্রস্তের শিকার। এএমআর যদি সঠিকভাবে চিহ্নিত এবং প্রতিহত না করা যায়, তবে ২০৫০ সাল নাগাদ প্রতি বছর এক কোটি মানুষ মারা যাবে শুধু কার্যকর অ্যান্টিবায়োটিকের অভাবে। বিশ্বব্যাপী এটা যেমন মৃত্যুহার আশঙ্কাজনক হারে বাড়াবে তেমনি অর্থনৈতিকভাবে বিশাল চাপের সৃষ্টি করবে। ডব্লিউএইচও ধারণা করছে, অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স বৃদ্ধির ফলে ২০৫০ সালে বৈশ্বিক স্বাস্থ্যসেবা খাতে অতিরিক্ত ব্যয় বাড়বে ১ দশমিক ২ ট্রিলিয়ন আমেরিকান ডলার।
অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স মোকাবেলা এবং সীমিত করার ক্ষেত্রে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কর্তৃক যে গ্লোবাল অ্যাকশন প্ল্যান ২০১৫ করা হয়েছে, সেটাকে যদি আমরা আমাদের দেশে সফলভাবে প্রয়োগ করতে পারি তবেই আমরা নিরাপদ অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার নিশ্চিত করতে পারব। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, গ্লোবাল অ্যাকশন প্ল্যান, পাঁচটি অভীষ্ট নির্ধারিত হয়েছে-
- কার্যকর যোগাযোগ, শিক্ষা ও ট্রেনিংয়ের মাধ্যমে অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স-সংক্রান্ত সচেতনতা বৃদ্ধি করা এবং এর সম্বন্ধে সঠিক তথ্য জানা;
- নজরদারি ও গবেষণা শক্তিশালী করা;
- সংক্রমণের হারকে হ্রাস করা;
- অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার যুক্তিসংগত করা;
- অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স প্রতিরোধ টেকসই বিনিয়োগ নিশ্চিত করা।
আমাদের জন্যও উপরোক্ত পরিকল্পনা সঠিক ও বাস্তবসম্মতভাবে তৈরি করা এবং কঠোরভাবে প্রয়োগ করা খুবই জরুরী। আজকে আমাদের এসডিজি অর্জনে সাফল্য দেখাচ্ছে। এ সাফল্য ধরে রাখতে হলে অর্থাৎ এসডিজির ১৭টি গোলের মধ্যে ৩ নং গোল Good Health and well-being, যা অর্জন কঠিন হয়ে যেতে পারে যদি আমরা AMR নিয়ন্ত্রণ বা সীমিত করতে না পারি।
বাংলাদেশে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের কোনো স্ট্যান্ডার্ড নীতিমালা এখন পর্যন্ত প্রণয়ন করা হয়নি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ২০১১ সালে “Hospital antibiotic policy and standard treatment guideline” প্রণয়ন করে। আমরা মনে করি, এর আলোকে বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক ও অন্যান্য প্রেক্ষাপট বিবেচনায় স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের একটি বাস্তবসম্মত নীতিমালা প্রণয়ন করা অতিজরুরি।
এক্ষেত্রে আমাদের প্রধান সীমাবদ্ধতা হলো নীতিমালা প্রণয়নের পর সেটার সঠিক বাস্তবায়ন, কঠোরভাবে প্রয়োগ ও নজরদারি নিশ্চিত করা।