বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স বলতে এমন এক অবস্থাকে বোঝায়, যখন কতিপয় ব্যাকটেরিয়া অ্যান্টিবায়োটিকের আক্রমণ থেকে বেঁচে থাকার ক্ষমতা অর্জন করে। এসব ব্যাকটেরিয়াকে বলা হয় অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্ট ব্যাকটেরিয়া। এরা অ্যান্টিবায়োটিকের উপস্থিতিতেও স্বাভাবিক গতিতে বেড়ে উঠতে ও বংশবিস্তার করতে পারে। এতে মানুষ বা পশুর শরীরের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা হ্রাস পায়। আগে যে অ্যান্টিবায়োটিকে রোগ সেরে যেত, সেই অ্যান্টিবায়োটিকে তা সারে না।
জিনগত পরিবর্তনের ফলে কিছু জীবাণু অ্যান্টিবায়োটিকের ধ্বংস করা ক্ষমতাকে (অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স) অভিযোজন করে নেয়। যদিও প্রাকৃতিকভাবে অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স তৈরি হচ্ছে, কিন্তু অনিয়ন্ত্রিত অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার (মানুষ ও প্রাণীতে) রেজিস্ট্যান্স প্রক্রিয়াকে বিপজ্জনকভাবে ত্বরান্বিত করছে। ফলে বর্তমানে কিছু সংক্রমণের চিকিৎসা খুবই কঠিন হয়ে যাচ্ছে যেমন—নিউমোনিয়া, যক্ষ্মা, গনোরিয়া, টাইফয়েড ইত্যাদি। অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স প্রাকৃতিক কারণ ছাড়াও আমরা অনেকগুলো কারণকে চিহ্নিত করি। যেগুলো রেজিস্ট্যান্স সংকটের জন্য দায়ী। যেমন—
১. অ্যান্টিবায়োটিকের অতিরিক্ত (মাত্রা ও সময়) ব্যবহার;
২. সাধারণ সর্দি-কাশি-জ্বর হলে প্রেসক্রিপশন ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিকের অপ্রয়োজনীয় ব্যবহার (ভাইরাল সংক্রমণে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার);
৩. সঠিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা (ডায়াগনসিস) না করে ব্যবহার;
৪. ভাইরাস সংক্রমণে সেকেন্ডারি ইনফেকশন বন্ধ করার জন্য অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার (যার কোনো প্রমাণ পাওয়া যায় না);
৫. অ্যান্টিবায়োটিকের কোর্স সম্পূর্ণ না করা। উপসর্গ কমে গেলে অ্যান্টিবায়োটিক বন্ধ করে দেয়া;
৬. রেজিস্টার্ড চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র (প্রেসক্রিপশন) ছাড়া ফার্মেসি থেকে অ্যান্টিবায়োটিক বিক্রয়। আমাদের জানা দরকার, পৃথিবীর কোনো উন্নত দেশেই চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক ক্রয় করা যায় না।
৭. চিকিৎসককে চাপ প্রয়োগ করে বা অন্যভাবে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবস্থাপত্রে অন্তর্ভুক্ত করা;
৮. প্রাণীর ক্ষেত্রে অতিরিক্ত ও অতিমাত্রায় অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার। এমনকি মৎস্য চাষেও (বিশেষ করে হ্যাচারিতে) অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার হয়। আজকে আমরা ‘ওয়ান হেলথ’ ধারণাকে সর্বত্র ব্যবহার করছি। যেখানে মানুষ, প্রাণী (মৎস্যসহ), গাছপালা ও পরিবেশকে সমন্বিত করে অনুকূল স্বাস্থ্য নিশ্চিত করার আহবান জানানো হয়েছে।
৯. সাধারণ মানুষের মধ্যে একটা ধারণা বিদ্যমান যেকোনো রোগ হলে অ্যান্টিবায়োটিক খেতে হবে। সেই ধারণা থেকে ফার্মেসি থেকে ঘন ঘন অ্যান্টিবায়োটিক কিনে খাওয়া;
১০. অনেক সময় অপ্রয়োজনীয় একাধিক অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার করা হয়। তবে কিছু কিছু রোগের চিকিৎসার নীতিমালায় একাধিক অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার সর্বস্বীকৃত, যেমন—যক্ষ্মা।
১১. চিকিৎসক কর্তৃক সংক্রমণের শুরুতে সঠিক রোগ নির্ণয় ব্যতীত সর্বশেষ প্রজন্মের অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার। যদি প্রথম প্রজন্মের ওষুধ কার্যকরী হয় সেক্ষেত্রে সেটা দিয়েই চিকিৎসা শুরু করা উচিত এবং চিকিৎসা নীতিমালা যতদিন ওষুধ সেবনের পরামর্শ দেয় ততদিনই সেবন করা। কোনোভাবেই কম বা বেশিদিন ব্যবহার করা উচিত নয়।
১২. হাসপাতাল-চেম্বারে দুর্বল ও অপ্রতুল সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণব্যবস্থা।